ফুটবলে ফ্রি-কিক এমন এক মুহূর্ত যেখানে একজন খেলোয়াড়ের মেধা, স্নায়ু ও নিখুঁততা একসাথে পরীক্ষা হয়। ইতিহাসের বহু কিংবদন্তি নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছেন ঠিক এই জায়গা থেকেই— বলের বক্রতা, শক্তি আর চোখ ধাঁধানো নিখুঁততা দিয়ে বদলে দিয়েছেন ম্যাচের গতি ও ফলাফল। সমর্থকেরা আজও স্মরণ করে সেই সব গোল, যেগুলো যেন পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মকেও অমান্য করে জালে জড়িয়ে গেছে। ঠিক এই কারণেই আজকের তালিকা বিশেষ—কারণ এখানে রয়েছে সেই পাঁচজন ফুটবলার, যারা Players With Incredible Free-Kick Records বলে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তাদের প্রতিটি গোল শুধু সংখ্যা নয়; এগুলো ফুটবলের ইতিহাসে একেকটি শিল্পকর্ম। এই পাঁচজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার প্রমাণ করে দেয় যে, নিয়মানুবর্তিতা, কৌশল, আর প্রতিভা একসাথে থাকলে যেকোনো জটিল পরিস্থিতিকে করা যায় জয়ের সুযোগে রূপান্তর। সময়ের সেরা সেরা ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকও বহুবার দিশেহারা হয়েছেন তাদের বাঁকানো বল বা বজ্রগতির শটে। তারা প্রত্যেকে নিজেদের আলাদা স্টাইল তৈরি করেছেন—কেউ শক্তি দিয়ে, কেউ নিখুঁত বাঁক দিয়ে, কেউ আবার প্রতিপক্ষের মনস্তত্ত্ব বুঝে অপ্রত্যাশিত শটে গোল করেছেন। ফুটবলের সৌন্দর্যের এক অন্যতম বড় অংশ এই ফ্রি-কিক, আর এই পাঁচ কিংবদন্তি সেই সৌন্দর্যের স্থপতি। আর্টিকেলের মাঝজুড়ে আপনি ছয়বার পাবেন লাইনটি—Players With Incredible Free-Kick Records—যা এই কিংবদন্তিদের অসাধারণ কৃতিত্বকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরবে।
5. Ronaldinho – 66 Goals

রোনালদিনহো নামটি উচ্চারিত হলে ফুটবলপ্রেমীরা প্রথমেই মনে করেন হাসিখুশি এক জাদুকরের কথা, যার প্রতিটি ছোঁয়াতে লুকিয়ে ছিল বিস্ময়। তার ফ্রি-কিক নেওয়ার স্টাইল ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—কখনো বক্রতায়, কখনো ধীরগতির লব, আবার কখনো অপ্রত্যাশিত শক্তিশালী শটে গোলরক্ষককে হতভম্ব করে দিতেন তিনি। ফুটবল বিশ্বে Players With Incredible Free-Kick Records তালিকার কথা উঠলে রোনালদিনহোকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। ২০০২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার সেই ঐতিহাসিক ফ্রি-কিক গোটা ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে। দূর থেকে নেওয়া সেই শটে ছিল অদ্ভুত এক বুদ্ধিমত্তা, যা আজও বিতর্কিত—তিনি কি সত্যিই শটটি গোল করার উদ্দেশ্যে নিয়েছিলেন, নাকি এটি ছিল নিছক দুর্ঘটনা? নিজে পরবর্তীতে স্বীকার করলেও যে তিনি ঠিক লক্ষ্য করেননি, কিন্তু তার কৌশল, অন্তর্দৃষ্টি এবং বলের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ছিল অতুলনীয়। ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনা, প্যারিস সেন্ট জার্মেইন ও মিলানের হয়ে অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান। ডিফেন্ডাররা দূর থেকে তার পায়ের কোনো অদ্ভুত জাদুর প্রতীক্ষায় থাকতেন, কারণ জানতেন—রোনালদিনহো যেকোনো মুহূর্তে ফ্রি-কিককে গোলের সোনার সুযোগে রূপ দিতে পারেন। তার ক্যারিয়ারের 66টি ফ্রি-কিক গোল শুধু সংখ্যা নয়; এগুলো প্রমাণ করে যে, তিনি ছিলেন জন্মগত শিল্পী। আজও অনেক তরুণ খেলোয়াড় তার ভিডিও দেখে শেখার চেষ্টা করে কিভাবে পায়ের টাচ দিয়ে বলের গতি ও বক্রতা বদলে দেওয়া যায়। নিখুঁততা, সৃজনশীলতা এবং অপ্রত্যাশিততার এই মিশ্রণে তিনি নিঃসন্দেহে Players With Incredible Free-Kick Records তালিকার অন্যতম উজ্জ্বল নাম।
4. Victor Legrottaglie – 66 Goals

ভিক্টর লেগ্রোত্তাগ্লিয়ে নামটি হয়তো অনেক সমর্থকের কাছে ততটা পরিচিত নয়, তবে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে তিনি এক নীরব মহাতারকা। গিমনাসিয়া ওয়াই এসগ্রিমা ক্লাবের প্রতি তার অদম্য ভালোবাসা এবং পুরো ক্যারিয়ার এক ক্লাবেই কাটানোর সিদ্ধান্ত তাকে করেছে সত্যিকারের এক প্রতীক। লেগ্রোত্তাগ্লিয়ে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর ডাক পেয়েও নিজ দেশের ফুটবল ছাড়েননি, আর সেখানেই তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের সোনালী অধ্যায়। তার 66টি ফ্রি-কিক গোল প্রমাণ করে তিনি Players With Incredible Free-Kick Records শ্রেণির খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থায়ী আসন পাওয়ার যোগ্য। যদিও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার খেলার সুযোগ হয়নি, তবু তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আর্জেন্টিনার সীমানার বাইরেও। তার ফ্রি-কিক স্টাইল ছিল অত্যন্ত কারিগরি; বলকে নিচু রাখতে কিংবা হঠাৎ বক্রতা দিতে তিনি ছিলেন অসাধারণ। গোলরক্ষকেরা জানতেন—যে দূরত্ব থেকেই ফ্রি-কিক হোক না কেন, লেগ্রোত্তাগ্লিয়ে বিপজ্জনক। তার দৃঢ় মনোযোগ, অনুশীলন ও বলের উপর অদ্ভুত নিয়ন্ত্রণ তাকে বানিয়েছে প্রকৃত অর্থেই ফ্রি-কিক মাস্টার। তার নাম আজও দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ইতিহাসে সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। তরুণ খেলোয়াড়দের কাছে তিনি এক অনুপ্রেরণা; কারণ তিনি দেখিয়েছেন জনপ্রিয়তার অভাব সাফল্য নির্ধারণ করে না, বরং দক্ষতা ও ধারাবাহিকতাই গড়ে দেয় ইতিহাস। তাই লেগ্রোত্তাগ্লিয়ের নাম শুনলে মনে পড়ে তার সেই কারিগরি নিখুঁততা, যেটি তাকে Players With Incredible Free-Kick Records এর যোগ্য প্রার্থী করেছে।
Also Read:
- Top 5 Football Players Who Acted in Hollywood Movies
- Top 5 Cricketers Married To Beautiful Actresses And Models
- Top 10 Players with Most Runs in Bangladesh Premier League History
3. Lionel Messi – 68 Goals

লিওনেল মেসির নামই যথেষ্ট—ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন। তার ফ্রি-কিক দক্ষতা যেন একেবারে আলাদা এক শিল্প। কোনো তাড়াহুড়া নয়, বাড়তি শক্তি নয়—মাত্র একটি নিখুঁত বাঁকই যথেষ্ট বলকে গোলের দিকে পাঠাতে। বার্সেলোনার হয়ে তার ৫০টি ফ্রি-কিক গোল, আর্জেন্টিনার হয়ে ১১টি এবং ইন্টার মায়ামির হয়ে সাম্প্রতিক ৫টি গোল প্রমাণ করে তিনি Players With Incredible Free-Kick Records তালিকার অন্যতম শীর্ষ নাম। ২০২৫ সালেও ৩৭ বছর বয়সে তিনি প্রমাণ করেছেন, দক্ষতা বয়সের সঙ্গে কমে না। বরং অভিজ্ঞতা তাকে করেছে আরও বিপজ্জনক। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, যখন গোলরক্ষক ও সমর্থক সকলেই শ্বাস ধরে থাকেন, মেসি তখন শান্তভাবে বলটি বসিয়ে নিজের জাদুকরি বাঁ পায়ের মাধ্যমে বলকে জালের কোণায় পাঠান। বল তার পা থেকে বের হওয়ার পর দেখলে মনে হয় যেন বল নিজে নিজেই পথ খুঁজে নেয়। তার কিক নেওয়ার সময়ের ভঙ্গি, চোখের দৃষ্টি এবং নিখুঁততা ফুটবল ইতিহাসে অনন্য। যেকোনো ডিফেন্সলাইনকে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখতেন তিনি কেবল একটি ফ্রি-কিকের মাধ্যমেই। এ কারণেই তিনি শুধু গোলদাতা নন; তিনি একজন পরিপূর্ণ স্থপতি, যিনি ফ্রি-কিককে করেছে কৌশলের অস্ত্র। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি আইকন—কারণ মেসি শিখিয়েছেন কীভাবে কঠোর পরিশ্রম আর অবিচলতা দিয়ে ফ্রি-কিককে নিজের অস্ত্র বানানো যায়। নিঃসন্দেহে তিনি Players With Incredible Free-Kick Records তালিকার অন্যতম সেরা প্রতিনিধিত্বকারী।
2. Pele – 70 Goals

পেলে—“ফুটবলের রাজা”—এই উপাধি পাওয়া কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়। তার ক্যারিয়ার ভরপুর ছিল অসাধারণ মুহূর্তে, আর ফ্রি-কিক ছিল তার অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র। সান্তোস ও নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলার সময় পেলে তার শক্তিশালী শরীর, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং বিদ্যুতগতি সিদ্ধান্ত ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়েছেন অসংখ্যবার। ৭০টি ফ্রি-কিক গোল করে তিনি নিশ্চিতভাবেই Players With Incredible Free-Kick Records তালিকায় অগ্রগণ্য। তার ফ্রি-কিক ছিল ভয়ঙ্কর—বলটির গতি ও ঘূর্ণন এতই শক্তিশালী ছিল যে অনেক গোলরক্ষক বলের গতিপথ বুঝতেই পারতেন না। তাকে বলা হয় ফ্রি-কিকের প্রথম প্রকৃত “শক্তির রাজা”—কারণ তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, শক্তির সঙ্গে দক্ষতা মিশে গেলে গোলরক্ষক কোনো সুযোগই পায় না। পেলের খেলা ছিল একেবারে ভিন্ন মাত্রার; তিনি মুহূর্তে ম্যাচের রিদম বদলে দিতে পারতেন। তার দৃঢ়তা এবং নির্ভুলতা ফুটবলকে এনে দিয়েছে নতুন মান। ফুটবলের নতুন প্রজন্মও স্বীকার করে পেলে ছিলেন সেই খেলোয়াড় যিনি ফ্রি-কিককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার শটের বলের নিচু গতি, মাঝে মাঝে আকস্মিক উঁচু বাউন্স ও নির্ভুলতা গোলরক্ষকদের বারবার ছলকে ফেলতো। যদিও তিনি সবচেয়ে বেশি ফ্রি-কিক গোলদাতা নন, তবু তার অবদান বা প্রভাব ফুটবলের ইতিহাসে অম্লান। তাই পেলের নাম উচ্চারিত হলে সবাই জানে—তিনি সেই কিংবদন্তিদের একজন, যারা Players With Incredible Free-Kick Records তালিকাকে মহিমান্বিত করেছেন।
1. Juninho Pernambucano – 77 Goals

জুনিনিয়ো পেরনামবুকানো—এই নামটি ফুটবলের ফ্রি-কিক ইতিহাসের মুকুটের রত্ন। তাকে বলা হয় “ফ্রি-কিকের GOAT”, আর এর পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ৭৭টি ফ্রি-কিক গোল কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়—বরং এটি বছরের পর বছর অনুশীলন, অধ্যবসায়, কৌশল আর অসামান্য প্রতিভার ফল। তার নেওয়া প্রতিটি ফ্রি-কিক ছিল রহস্যময়—কখনো বল নিচু হয়ে যেত, কখনো হঠাৎ বাতাসে উঠে আবার নিচে নামে, আবার কখনো গতি এমন হতো যে গোলরক্ষকের হাত ছুঁতে না ছুঁতেই বল জালে ঢুকে যেত। তার “knuckleball” কৌশল আজও অনেক তারকা শিখতে চান। লিঁও’র হয়ে তার সময়টা ছিল স্বর্ণালী; প্রতিটি মৌসুমেই তিনি নিজের ফ্রি-কিক দক্ষতা দিয়ে ক্লাবকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এগিয়ে নিয়েছেন। কৌশলের পাশাপাশি তার আত্মবিশ্বাস ছিল অবিশ্বাস্য—যেকোনো দূরত্ব, যেকোনো কোণ, যেকোনো পরিস্থিতি—জুনিনিয়ো জানতেন তিনি গোল করতে পারবেন। তার প্রতিভা শুধুই শারীরিক নয়; বলের গতিপথ কল্পনা করার মানসিক ক্ষমতা তাকে নিয়ে গেছে আলাদা এক স্তরে। ফুটবল বিশ্ব স্বীকার করে যে, তিনিই সেই খেলোয়াড় যার কারণে আধুনিক ফ্রি-কিক কৌশল বদলে গেছে। তার অবদান এতটাই গভীর যে আজকের তারকারাও তার ভিডিও দেখে কৌশল শিখেন। নিঃসন্দেহে তিনি Players With Incredible Free-Kick Records তালিকার শীর্ষতম নাম, যিনি ফ্রি-কিককে শুধু গোল করার পদ্ধতি নয়—এক ধরনের শিল্পে রূপ দিয়েছেন।